
shershanews24.com
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:১৭ পূর্বাহ্নমিতালী পারভীন:করোনা মোকাবেলায় টিকা প্রদান কার্যক্রমের সাফল্যের উপর বিশ্বের দেশগুলোর করোনাত্তোর বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা ও সাফল্য নির্ভর করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো ইতোমধ্যে সিংহভাগ জনগণকে টিকা দিয়ে সুরক্ষাবলয় তৈরি করেছে। পুরোদমে অর্থনৈতিক কার্যক্রমও শুরু করে দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দিয়েছে। তবে শুরুতেই বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও টিকা সংকটে পড়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। করোনার শুরুতে প্রয়োজনীয় ওষুধ উৎপাদন, মাস্ক-পিপিই, সেনিটাইজারসহ সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের পাশাপাশি কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্য দাবি করা হচ্ছিল, যদিও এসব নিয়ে অনেক কেলেংকারি হয়েছে। তবে করোনা নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিনই একমাত্র উপায় হওয়ার কারণে ভ্যাকসিনেশনের সাফল্যের উপর যেকোনো দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি ফিরিয়ে আনার অন্যতম নিয়ামক বলে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ শুরুতে টিকা কার্যক্রম সফলভাবে শুরু করলেও কিছুদিন না যেতেই তাতে ছেদ পড়ে। ভারতে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হওয়ায় টিকা রফতানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ বিপদে পড়ে। পরবর্তীতে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে জোর তৎপরতা শুরু করে। চীন, জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। এতে পর্যায়ক্রমে টিকা এলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। এরমধ্যেই সরকার গণটিকা কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং টিকা প্রদান শুরু করে। তবে টিকার অপর্যাপ্ততা ও সমন্বয়ের অভাবে টিকার সংকট দেখা দেয়। এ বাস্তবতায় সরকার গণটিকা কর্মসূচি স্থগিত করেছে। করোনা মোকাবেলায় আমাদের এই পিছিয়ে পড়া হতাশাজনক।
দেশে যে চাহিদার তুলনায় টিকার সংকট প্রকট, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। প্রায় দুই কোটিরও বেশি মানুষ নিবন্ধন করে টিকার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ এখন ব্যাপক। প্রত্যেকেই টিকা নিতে চায়। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যাপ্ত টিকা না থাকা। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত টিকা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বাস্তবচিত্র ভিন্ন। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ টিকা পাওয়ার কথা তা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য নির্বিঘœ করতে জনগণকে টিকা দেয়ার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকারও কোনো সুযোগ নেই। পিছিয়ে থাকার অর্থই হচ্ছে, রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতির মূল খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে নিমজ্জিত হওয়া। ফলে জাতীয় স্বার্থে করোনা টিকার বিদ্যমান সংকট ও অনিশ্চয়তা দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে।
আমরা মনে করি, জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে টিকা সংগ্রহ এবং যথযাথ সমন্বয়ের মাধ্যমে টিকা প্রদানের কাজটি বেগবান করতে হবে।
(সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ৩০ আগস্ট ২০২১ প্রকাশিত)