
shershanews24.com
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:০৬ অপরাহ্নসাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর প্রকৌশল শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এনপিএস গ্রেড-১০) পদে কর্মরত আছেন মোহা. আব্দুর রহমান। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শিল্প মন্ত্রণালয়াধীন বিসিআইসি সংস্থার আইসিটি বিভাগে উপ-ব্যবস্থাপক (এনপিএস গ্রেড-৬) হিসেবে কর্মরত ইমরান আহমেদ এর নামে তাঁর দপ্তর প্রধানের নিকট সম্পূর্ণ ভুয়া, বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে বিপাকে পড়েছেন। ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে তার কর্মস্থল বিসিআইসিতে বিভিন্ন বিষয়ে অফিসিয়ালি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আব্দুর রহমান। এমনকি ফোনেও অভিযোগ করেন। কিন্তু সেইসব অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণক দাখিল করতে বলা হলে তিনি তা দাখিল করতে পারেননি। ফলে এখন তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাকে এ ব্যাপারে আইনি নোটিশও দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিসিআইসির উপব্যস্থাপক ইমরান আহমেদ নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যেখানে বসবাস করেন একই আবাসন প্রকল্পে বুয়েটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রহমানেরও ফ্ল্যাট আছে। জায়গা-জমি নিয়ে পূর্ব থেকেই দুজনের মধ্যে বিরোধ ছিলো। কিন্তু ইমরান আহমেদকে ঘায়েল করার জন্য আব্দুর রহমান ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। গত ০১ আগস্ট ২০২১ তারিখে প্রথমে বিসিআইসির আইসিটি বিভাগীয় প্রধানের নিকট ফোনে মোহা. আবদুর রহমান জানান যে, আপনার অধীনে কর্মরত ইমরান আহমেদ বসবাসরত সকলের কাছে টাকা ধার চায়। এ বিষয়ক আমার অভিযোগ আমি ইমেইল এ প্রেরণ করব। ০২ আগস্ট ২০২১ তারিখ ভোর ৬:০৩ মিনিটে আব্দুর রহমান নিজ দাপ্তরিক পরিচয় ব্যবহার করে স্বাক্ষরবিহীন একটি অভিযোগ ই-মেইলে আইসিটি বিভাগীয় প্রধানের বরাবরে দাখিল করে ও কপি বিসিআইসি সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করে। স্বাক্ষরবিহীন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে বিষয়টি জনাব মোহা. আব্দুর রহমান-কে অবহিত করা হলে ০২ আগস্ট ২০২১ তারিখ ১:১৭ মিনিটে মোহা. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত অভিযোগ ই-মেইলে দাখিল করে ও কপি বিসিআইসি সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করে। অভিযোগের বিপরীতে বিসিআইসি এর আইসিটি বিভাগ ০২ আগস্ট ২০২১ তারিখ প্রমাণক চেয়ে পত্র ইস্যু করে। পত্রে উল্লেখ করা হয় যে, “অত্র বিভাগে এনপিএস-৬ গ্রেডে দীর্ঘদিন কর্মরত একজন সৎ, মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সামগ্রিক প্রমাণক আপনার যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ০৪ আগস্ট ২০২১ তারিখের মধ্যে নি¤œ স্বাক্ষরকারীর নিকট দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা গেল। অভিযোগ প্রেরণের বিষয়ে আপনি ১৭ জনের কথা উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ প্রেরণে উল্লিখিত ১৭ জন স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীও অত্র সাথে যুক্ত করার পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে। ধরে নেয়া হচ্ছে আপনি সকল প্রমাণক সংগ্রহ করে একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সকল প্রমাণক দাখিল না করলে আপনার অভিযোগ মিথ্যা/ মনগড়া/ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হবে। অভিযোগ মিথ্যা/ মনগড়া/ ভিত্তিহীন প্রমাণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেরে একজন মেধাবী ও সংস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে হয়রানি, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয়, মানুষিক ক্ষতি সাধন ও মানহানির অভিযোগে সরকারি চাকুরী আইন ২০১৮ এর ২৪(৩) ধারা অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গৃহীত হবে”। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর প্রকৌশল অফিসে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এনপিএস গ্রেড-১০) জনাব মোহা. আব্দুর রহমান তাঁর করা অভিযোগের বিপরীতে যথাযথ কোন প্রমাণক দাখিল না করে আপত্তিকর মন্তব্য লিখে পুনরায় আইসিটি বিভাগসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট ই-মেইল করেন। বিসিআইসি কর্মকর্তার সাথে আব্দুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস, বুয়েট কর্তৃক এ ধরণের দাপ্তরিক অসদাচরণ এর বিষয়ে বিধি-মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করে বুয়েট প্রশাসনকে পত্র প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে বিসিআইসি এর আইসিটি বিভাগ থেকে প্রশাসন বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। পত্রে বলা হয়েছে, “জনাব মোহাঃ আব্দুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস, বুয়েট, ঢাকা-১০০০ তাঁর দাপ্তরিক পরিচয় ব্যবহার করে অত্র বিভাগে কর্মরত উপ-ব্যবস্থাপক ইমরান আহমেদ এর নামে আইসিটি বিভাগে অভিযোগ দাখিল করে বিসিআইসি এর সম্মানিত চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) সহ প্রশাসন বিভাগে অনুলিপি প্রেরণ করেন (কপি সংযুক্ত)। অভিযোগ পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিযোগসমূহ বিসিআইসি সংশ্লিষ্ট নয়। তদুপরি জনাব ইমরান আহমেদ, উপ-ব্যবস্থাপক এর নামে ফৌজদারি অপরাধ সংশ্লিষ্ট আপত্তিকর অভিযোগ বিদ্যমান থাকায় অভিযোগকারীর নিকট অভিযোগের বিপরীতে যাবতীয় প্রমাণক চেয়ে ০২ আগস্ট ২০২১ তারিখে অত্র বিভাগ থেকে পত্র প্রেরণ করে তাঁর কর্তৃপক্ষের সদয় জ্ঞাতার্থে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়। জনাব মোহাঃ আব্দুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বুয়েট যথাযথ প্রমাণক প্রেরণ না করে বরং আপত্তিকর কথা-বার্তা লিখে অত্র দপ্তরে ই-মেইল প্রেরণ করেন। অভিযোগকারী কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগের বিষয়ে কোনরূপ প্রমাণক দাখিল করতে পারেননি। তাছাড়া অত্র বিভাগে কর্মরত মহাব্যবস্থাপক (এমটিএস) টেলিফোনিক আলাপে একসাথে বসবাসরত অন্যান্য মালিকদের নিকট থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন অভিযোগটি ভিত্তিহীন, মিথ্যা। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে জনাব ইমরান আহমেদ-কে কর্মস্থলে হেয় করা ও ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশ্যে এ ধরণের অভিযোগ দাখিল করেছেন। ভিত্তিহীন মিথ্যা অভিযোগের কারণে বিসিআইসি তথা বিসিআইসি এর কর্মকর্তা হিসেবে জনাব ইমরান আহমেদ এর কর্মস্থলে ব্যাপক মর্যাদাহানি হয়েছে। তাছাড়া এ ধরণের ভিত্তিহীন মিথ্যা অভিযোগ মানসিক ক্ষতিরও অন্যতম কারণ বলে অত্র বিভাগ মনে করে”।
এ বিষয়ে বিসিআইসি এর কর্মকর্তা জনাব ইমরান আহমেদ এর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান যে, ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ক মিথ্যা অভিযোগের কারণে আমার কর্মস্থলে ব্যাপক মর্যাদাহানি হয়েছে। মোহা. আব্দুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস, বুয়েট পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার কর্মস্থলে হেয় প্রতিপন্ন করা, আমার ব্যক্তিগত সুনাম নষ্ট করা ও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এরূপ কর্মকাণ্ড করেছেন। মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে এটা তার একটা উদাহরণ। বছর দুয়েক তিনি আমাকে ও আমার পরিবারকে বিরক্ত ও হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে আমার স্ত্রী সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি ভবনের বসবাসরত মালিকগণ অবগত আছেন। আমি আব্দুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস, বুয়েট-কে আইনি নোটিশ প্রেরণ করেছি। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৫ ও ২৯ ধারায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আদালত বাকিটা বিবেচনা করবেন।
সামগ্রিক বিষয়টি জানতে আব্দুর রহমান এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি কিন্তু তার আগে তিনিও আমার অফিসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন সেটি কি অবস্থায় আছে এখন- এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান শীর্ষকাগজের এ প্রতিবেদককে বলেন, সেটি আপনারাই খোঁজ নিয়ে দেখুন। আপনি ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন সেটি তো মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে- এ কথার জবাবে আব্দুর রহমান বলেন, তার প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে তদন্ত করেনি।
অপরদিকে ইমরান আহমেদ এর প্রতিবেশীদের নিকট থেকে খোঁজখবর নেয়া হলে তাদের বেশ কয়েকজন এ বিষয়ে বলেন, মোহা. আব্দুর রহমান এর অভিযোগটি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
(সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ৩০ আগস্ট ২০২১ প্রকাশিত)