
shershanews24.com
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর, ২০২১ ০১:০০ অপরাহ্নসাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের সৌজন্যে, নতুন উদ্যোগ নিয়ে আবারও প্রযুক্তিবিশ্বে হাজির এলন মাস্ক। এবার তার লক্ষ্য নিম্ন কক্ষপথে পাঠানো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়া। সবার উৎসুক চোখ এই প্রকল্পের দিকে। স্পেসএক্সের অধীনে এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে স্টারলিঙ্ক।
স্টারলিঙ্ক
প্রযুক্তি বিশ্বে এলন মাস্ক মানেই নতুন আইডিয়া। একের পর এক সফল আইডিয়া তাকে এনে দিয়েছে বিশ্বসেরা উদ্যোক্তার সম্মান। বৈদ্যুতিক গাড়ির সংস্থা টেসলার পরে আইডিয়াবাজ এ মানুষ এবার হাজির হয়েছেন বাণিজ্যিক মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স নিয়ে। স্পেসএক্সের মাধ্যমে পরিচালিত প্রকল্প স্টারলিঙ্ক। হাজার হাজার স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন করা এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো প্রটোটাইপ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্টারলিঙ্কের যাত্রা শুরু হয়। এরপর কয়েক বছর ধরে একের পর এক স্যাটেলাইট পাঠানোর মধ্য দিয়ে নিজের সক্ষমতা যাচাই করে তারা। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কৃত্রিম স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড সার্ভিস। ২০২০ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন থেকে প্রায় ৮৮৫.৫ মিলিয়ন ডলার অনুদানের তহবিল পাওয়ার পর পেরিয়ে গেছে দেড় বছর। উৎক্ষেপণের পর এখন সেটি বাণিজ্যিক ব্যবহার করার জন্য প্রায় প্রস্তুত। এ সিস্টেম পুরোপুরি চালু থাকলে সমস্ত ব্রিটিশ ব্রডব্যান্ড সার্ভিস হটিয়ে যুক্তরাজ্যের ব্রডব্যান্ড ব্যবসার একচেটিয়া দখল নেবে স্টারলিঙ্ক। এ বছর জুন মাসে স্পেসএক্স ঘোষণা দিয়েছে তাদের গ্রাহকের সংখ্যা এবার ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। বেটা পর্যায়ের পরীক্ষা শেষে খুব শিগগিরই বাণিজ্যিক যাত্রার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হবে তারা।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসেছে স্টারলিঙ্ক ব্রডব্যান্ড রাউটার। তবে সাধারণ রাউটারের মতো এটি ছোটখাটো নয়। একটি স্যাটেলাইট ডিশের মতো গোল অর্ধবৃত্তাকৃতি চাকতি। এই অর্ধবৃত্তাকৃতি স্যাটেলাইট ডিশ বসানো হবে বাড়ির বাইরে। খুব শিগগিরই ইন্টারনেট সেবায় চমৎকার বিকল্প হতে যাচ্ছে স্টারলিঙ্ক। আর ব্রডব্যান্ড সেবার নামের সঙ্গে যেহেতু জড়িয়ে আছে এলন মাস্কের নাম বলাবাহুল্য যে, প্রযুক্তি বিশ্ব তো বটেই সাধারণ মানুষের চোখও এখন স্টারলিঙ্কের দিকেই।
কীভাবে কাজ করে
স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের নানা রকম কাজের ভেতরে আছে টিভি সংযোগ, ইন্টারনেট সেবা, জিপিএসের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো মানুষের অবস্থান নির্ণয়। এগুলো ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন কাটানো মুশকিলেরই হয়ে যায়। তবে আমাদের প্রযুক্তিনির্ভরতা যত বাড়ছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্রডব্যান্ডের চাহিদা। আর ব্রডব্যান্ড কোম্পানিগুলোও পড়েছে মহাবিপদে। গ্রাহকের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে যেকোনো সময়ে তাদের প্রয়োজন মেটানোর দরকার হতে পারে। কিন্তু সীমিত ডেটা হাতে থাকলে তা দিয়ে গ্রাহকের চাহিদা মেটানো বেশ দুষ্কর। নইলে বাফারিং আর দেরির চক্করে জীবন জেরবার।
গ্রাহককে দ্রুততম সময়ে ডেটা পাঠানোর নিশ্চয়তা দিয়ে ব্রডব্যান্ডের গতি নিশ্চিত করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর স্টারলিঙ্ক। সেজন্য লেজারের মাধ্যমে ডেটা পাঠায় এ ব্রডব্যান্ড সিস্টেম। ফলে কোনো রকম তারের সংযোগ ছাড়াই গ্রাহক পাচ্ছেন ফাইবার অপটিকের মতো আলোর গতিতে ব্রডব্যান্ড সেবা। যদিও ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি আর লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড সেবায় ব্রডব্যান্ডের গতি প্রায় একই থাকে। তার পরেও প্রশ্ন চলে আসে, প্রচলিত ফাইবার অপটিক প্রযুক্তিকে হটিয়ে গ্রাহক কেন বেছে নেবে স্টারলিঙ্কের লেজার প্রযুক্তি? এই লেজার সিগন্যালকে শক্তিশালী ও এর বিস্তার নিশ্চিত করার জন্য স্টারলিঙ্ক ছাড়াও আরও একই নেটওয়ার্কে আরও চারটি স্যাটেলাইট কাজ করবে। যাতে কোনোভাবেই ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি না কমে। তবে কাভারেজ যত বিস্তৃত হবে লেজারের সময় তত কম লাগবে। আর স্টারলাইট চাইছে নেটওয়ার্কের বিস্তৃতির মাধ্যমে যেন পুরো পৃথিবীর ব্রডব্যান্ড সেবাই নিজেদের আওতায় এনে ফেলা যায়। এখন স্টারলিঙ্ক প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ আগামী বছরের মধ্যে ১২ হাজার স্যাটেলাইট লো আর্থ অরবিটে উৎক্ষেপ করা। যদি তাতে ক্রমাগত সাফল্য দেখা যায় তবে ধীরে ধীরে এই উপগ্রহের সংখ্যা বাড়িয়ে ৪২ হাজার করা হতে পারে। তবে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা বেশ বড় হওয়ায় মহাকাশ গবেষকদের জন্য সংখ্যাটি বেশ ভীতিকর বলে মনে হতে পারে। কারণ ইতিমধ্যেই পৃথিবীর চারপাশে অসংখ্য কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপিত হয়েছে। কাজ শেষে তাদের আর ফিরিয়ে আনা হয়নি বা ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে নতুন কোনো স্যাটেলাইট পাঠানো হলে, অনিয়ন্ত্রিত এ স্যাটেলাইটগুলো কার্যকর উপগ্রহের কাজ ব্যাহত করতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায়, উপগ্রহের জঞ্জালের এ ঝুঁকিকে বলা হয়ে থাকে কেসলার সিন্ড্রোম।
এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স কেসলার সিন্ড্রোম সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। যার কারণে তারা বেশিরভাগ কৃত্রিম উপগ্রহ অপেক্ষাকৃত নিচু কক্ষপথে পাঠাবে। যাতে ব্যবহার শেষে সে স্যাটেলাইটগুলোকে টেনে বায়ুমণ্ডলে আনা যায়। প্রচ- গতিতে টেনে আনার ফলে বায়ুম-লের ঘর্ষণে স্যাটেলাইটগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী মৃত জঞ্জাল হিসেবে মহাকাশে ঘুরপাক খাওয়ার বদলে স্পেসএক্সের চিন্তা নিঃসন্দেহে চমৎকার।
ব্রডব্যান্ডের গতি
বর্তমানে আমরা যে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করি তাদের গতি বেশ ধীর। সিগন্যাল পৌঁছাতে দেরির কারণে এর পারফরম্যান্স হয় ধীরগতির। সিগন্যাল পৌঁছাতে কেন দেরি হয় তা নিয়েও আছে ভিন্ন আলাপ। স্যাটেলাইটের সঙ্গে এর ডিস্কের দূরত্বের কারণে সিগন্যাল পৌঁছাতে দেরি হয়। তবে স্টারলিঙ্ক যেহেতু ডেটা পাঠানোর জন্য লেজার ব্যবহার করে তাই প্রচলিত ডেটা পাঠানোর তুলনায় অনেক দ্রুত স্যাটেলাইট সেবা পাওয়া সম্ভব।
স্টারলিঙ্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যে সময়ে ভোক্তাদের চাহিদা কম থাকবে তখন প্রতি সেকেন্ডে ১৫০ মেগাবাইট ডাউনলোড এবং প্রতি সেকেন্ডে ৪০ মেগাবাইট আপলোড করার মতো ইন্টারনেট স্পিড থাকবে। যে সময় গ্রাহকের চাহিদা তুঙ্গে থাকবে অর্থাৎ পিক আওয়ারের বিষয়ে কিছু জানায়নি স্টারলিঙ্ক। যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর ওপরে পরিচালিত একটি পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, স্টারলিঙ্ক প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ মেগাবাইট ইন্টারনেট সেবা দিতে সক্ষম। বিমান বাহিনীর ইন্টারনেট সেবার উন্নত অবকাঠামোর সঙ্গে বাইরের সাধারণ গ্রাহকের অবকাঠামোর তুলনা চলে না। তাই অবকাঠামোগত পরবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ গতি কমে যাবে এ বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার। ফলে পিক অফপিক মিলিয়ে স্পেসএক্স তার ব্যবহারকারীদের প্রতি সেকেন্ডে ৫০ থেকে ১৫০ মেগাবাইট আশা করতে বলেছে। সবমিলিয়ে যে অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা খুব একটা ভালো না বা যে অঞ্চলগুলো এখনো পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসেনি তাদের জন্য স্টারলিঙ্ক আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে। আর যে এলাকায় ভালো অবকাঠামো রয়েছে সে এলাকার লোকেরা কেবল গতির জন্যই স্টারলিঙ্ককে লুফে নেবে।
খারাপ আবহাওয়া ও অন্যান্য বাধার ফলে ইন্টারনেট সেবা বিঘিœত হবে কি? আবহাওয়া খারাপ থাকলে ইন্টারনেট সেবা বিঘিœত হবেই। এটি স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেটের খারাপ দিক। স্টারলিঙ্ক জানাচ্ছে, রিসিভারের ওপরের তুষার কিংবা বরফ পড়লে সেটি গলিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে সেটি। তবে এটি তার চারপাশের তুষার বা অন্যান্য বাধার বিষয়ে কিছুই করতে পারে না। অন্যান্য বাধার জন্য সরাসরি স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে। আবার ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল বাতাসও ইন্টারনেট সংযোগকে বিঘিœত করার ক্ষমতা রাখে।
কখন ও কোথায় সেবা পাওয়া যাবে
বেটা টেস্টিংয়ের জন্য ইতিমধ্যেই উত্তর আমেরিকা ও কানাডা জুড়ে বেশ কিছু এলাকায় স্টারলিঙ্ক তার গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা দেওয়া শুরু করেছে। আরও বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে ইন্টারনেট সেবা সম্পর্কিত তথ্য নেওয়ার আশায় স্টারলিঙ্ক তার কার্যক্রম বিস্তৃত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ বছর স্টারলিঙ্ক আলোচনায় আসার মূল কারণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। ফলে আরও অনেক দেশে স্টারলিঙ্কের বাণিজ্যিক অনুমোদনের আশায় কাজ করে যাচ্ছে স্টারলিঙ্ক দলের সবাই।
যুক্তরাজ্যের গ্রামীণ অঞ্চলে অল্প সংখ্যক গ্রাহকের কাছে সাড়া ফেলে দিয়েছে স্টারলিঙ্ক। সেখানে তাদের মূল প্রতিপাদ্য মন্দের ভালো বেটা। অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকায় তেমন ইন্টারনেট অবকাঠামো না থাকার ভেতরেও স্টারলিঙ্ক তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ এলাকার কিছু ব্যবহারকারী তো প্রতি সেকেন্ডে ০.৫ মেগাবাইট থেকে ৮৫ মেগাবাইটে উন্নীত হতে দেখেছেন ইন্টারনেট গতি। তাই বলা বাহুল্য, ইতিমধ্যেই গ্রাহকদের কাছে মন্দের ভালো নয়, আশীর্বাদ হিসেবে মন কাড়তে সক্ষম হয়েছে স্টারলিঙ্ক।
যুক্তরাজ্যের আইল অব ম্যান দ্বীপে রয়েছে স্টারলিঙ্কের তৃতীয় স্যাটেলাইট হাব। সম্প্রতি স্টারলিঙ্ক যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্যাটেলাইট হাবের জন্য লাইসেন্স নিতে সক্ষম হয়েছে। একবার এখানে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়ে গেলে পুরো যুক্তরাজ্যের ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য স্টারলিঙ্ক একাই যথেষ্ট হবে। কাজেই আমরা যখন ভাবছি কখন শুরু হবে, ততক্ষণে স্টারলিঙ্ক তার বাস্তবায়নের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তার ওপরে যুক্তরাজ্য সরকার ওয়ানওয়েব কোম্পানির মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২০ সালে দেউলিয়া হয়ে যায় ওয়ানওয়েব। পরে নতুন মালিকানায় ঢেলে সাজানো হচ্ছে ওয়ানওয়েবকে। ওয়ানওয়েবও মহাকাশে ৪৮ হাজার স্যাটেলাইট পাঠাবে বলে মনস্থির করেছিল। তবে কবে নাগাদ ওয়ানওয়েব ইন্টারনেট সেবা দেওয়া শুরু করবে সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নয়। ফলে স্টারলিঙ্ক যে এ বাজারে প্রভাব ফেলতে সক্ষম সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত। তাই আটলান্টিকের এদিকে ব্রডব্যান্ডের বাজারে নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে স্টারলিঙ্ক। ওয়ানওয়েবকে হটিয়ে স্টারলিঙ্ক তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়। ওয়ানওয়েব যেখানে প্রচলিত ব্রডব্যান্ড সেবা দিয়ে যাচ্ছে, স্টারলিঙ্ক সেখানে নতুন প্রযুক্তি এবং গতির দৌড়ে এগিয়ে আছে। সবমিলিয়ে স্টারলিঙ্কের সামনে আশার আলো ক্রমেই উজ্জ্বল হচ্ছে।
ইতিমধ্যে নির্বাচিত ১৪টি দেশকে স্টারলিঙ্ক তার ইন্টারনেট সেবার মধ্যে নিয়ে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিয়মিত স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছে। এছাড়াও প্রি অর্ডার চুক্তিতে ইতালি, পোল্যান্ড, স্পেন ও চিলিসহ অন্যান্য দেশে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করছে তারা।
খরচ
স্টারলিঙ্কের বেটা প্রজেক্টের সরঞ্জাম ও অবকাঠামোর জন্য ৪৩৯ ইউরো বা ৬০০ ডলার (৫১ হাজার ৬০০ টাকা) অগ্রিম দিতে হবে গ্রাহককে। প্রতি মাসে সাবস্ক্রিপশন ফি ৮৪ ইউরো বা ১২০ ডলার (১০ হাজার ৩২০ টাকা)। খরচের বিষয়টি নিয়ে ভাবলে যেকোনো ব্রডব্যান্ডের তুলনায় স্টারলিঙ্ক বেশি খরুচে। উন্নয়নশীল এলাকার জন্য স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট সেবা সাশ্রয়ী। কারণ যেখানে ইন্টারনেট সেবা অপ্রতুল ছিল সেখানে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার জন্য খরচের বিষয়ে তেমন ভাববে না র্কর্তৃপক্ষ। এককালীন খরচ বাদ দিলে প্রতি মাসের খরচের হিসাব তাদের কাছে নগণ্যই মনে হবে। প্রযুক্তি ভালোবাসে এমন লোক অবশ্য নতুন প্রযুক্তি কেমন কাজ করছে সেই আগ্রহ থেকেও স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট সেবা নেবে। অনেকেই এলন মাস্কের প্রযুক্তি বিপ্লবের কারণেও স্টারলিঙ্কের কাজ দেখার জন্য মুখিয়ে আছে।
বিতর্ক
এলন মাস্কের ওপর প্রযুক্তিবিদদের ভরসা থাকলেও জ্যোতির্বিদদের কেউ কেউ বেশ চিন্তিত। যদিও স্টারলিঙ্ক কয়েক বছরের ভেতরে হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই অসংখ্য স্যাটেলাইটের ভিড়ে মহাকাশ ভারাক্রান্ত হয়ে আছে। সেসব অকার্যকর বা ব্যর্থ মিশনে পাঠানো স্যাটেলাইটকে জ্যোতির্বিজ্ঞান বলছে জাঙ্ক স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে বিভিন্ন কোম্পানির যেরকম আগ্রহ দেখা যায়, কাজ শেষে সেগুলো সরিয়ে ফেলার বিষয়ে ততটাই উদাসীন তারা। পৃথিবী চারপাশ দিয়ে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো সেসব জাঙ্ক স্যাটেলাইট সরিয়ে ফেলার বিষয়ে কাউকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। মহাকাশের পরিবেশ নষ্টের বিষয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। ফলে এ বিষয় নিয়ে জ্যোতির্বিদদের উদ্বিগ্ন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এলন মাস্ক পরিষ্কারভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, কাজ শেষে স্যাটেলাইটগুলো ধ্বংস করে ফেলা হবে তখন কেউ কেউ নির্ভার হলেও, সবাই ঘোষণা অনুযায়ী বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায় আছে।
আবার স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইটগুলো যেহেতু পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠানো হবে, রাতের আকাশে দৃশ্যমান হবে সে জিনিস। তখন কেবল মহাকাশ দূষণই নয়, রাতের আকাশে তারা দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে পারে মানুষ। কিন্তু স্পেসএক্স-এর প্রেসিডেন্ট গুইন শটওয়েল এ বিষয়ে স্পষ্ট জানান, ‘ছোট বাচ্চারা যেন টেলিস্কোপের মাধ্যমে ঠিকমতো উপগ্রহ দেখতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই আমরা। রাতের আকাশে খোলা চোখে স্টারলিঙ্ক তাদের জন্য চমৎকার হবে। কিন্তু অন্যান্য প্রাকৃতিক গ্রহ উপগ্রহ দেখার ক্ষেত্রে স্টারলিঙ্ক যেন বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’ আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক সবমিলিয়ের ব্রডব্যান্ড ব্যবসায় টানটান উত্তেজনা তৈরি করে ফেলেছে স্টারলিঙ্ক। এবারে বাণিজ্যিক যাত্রায় সে উত্তেজনা তারা কতখানি ধরে রাখতে পারে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
(সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রকাশিত)