
shershanews24.com
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর, ২০২১ ১২:৫০ অপরাহ্নশীর্ষনিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের একটি কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যে ফেইসবুকের সাবেক কর্মী ও হুইসেলব্লোয়ার ফ্রান্সেস হাউজেন বলেছেন, ফেইসবুক ও তাদের অ্যাপগুলো শিশুদের ক্ষতি করছে, বিভেদ বাড়াচ্ছে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
বিবিসি জানায়, হাউজেনের তোলা অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেছেন ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ।
হাউজেন এক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন। এখন তিনি এই কোম্পানির নানা গোপনীয় তথ্য তুলে ধরতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ক্যাপিটল হিলে সিনেট কমিটির সামনে শুনানিতে ফেইসবুকের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন ৩৭ বছর বয়সী এই সাবেক কর্মী।
তবে ফেইসবুক বলছে, হাউজেন প্রতিষ্ঠানটির যে বিভাগগুলো নিয়ে কথা বলছেন, সেসব বিভাগ সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই।
ফেইসবুক সম্পর্কে এসব তথ্য এমন সময়ে সামনে এলো, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে এবং এটির ওপর নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।
শুনানির পর এক বিবৃতিতে ফেইসবুক বলেছে, হাউজেন যেভাবে অনেক বিষয়ে চিত্রাঙ্কন করেছেন, তার সঙ্গে তারা একমত নয়। তবে তারাও মনে করে, ইন্টারনেটের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন তৈরির সময় এসেছে।
‘ইন্টারনেটের বিধিবিধান সর্বশেষ ঠিক করা হয়েছে ২৫ বছর আগে। যে কাজটা আইন প্রণেতাদের করার কথা, সেই সমাজের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত এই শিল্পের কাছে আশা না করে বরং কংগ্রেসের এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার সঠিক সময়’, বিবৃতিতে ফেইসবুক বলেছে।
রবিবার সিবিএস নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হাউজেন বলেছেন, সম্প্রতি তিনি ফেইসবুকের বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
সেসব নথিপত্রের ভিত্তিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, ইনস্টাগ্রামের নিজেদের চালানো গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, এই অ্যাপটি মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
এই বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবারের শুনানিতে হাউজেন বলেন, ‘ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের কর্তাব্যক্তিরা জানেন যে, কীভাবে এগুলোকে আরও নিরাপদ করা যায়, কিন্তু তারা সেসব পদক্ষেপ নেননি। কারণ তারা জনগণের ভালোর চেয়ে নিজেদের মুনাফার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।’
তিনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তিনি নিজে ছাড়া সেখানে তাকে জবাবদিহি করার মতো আর কেউ নেই।’
‘গতকাল আমরা দেখেছি যে, ইন্টারনেট থেকে ফেইসবুক কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি জানি না সেটা কীভাবে হয়েছে, কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার জন্য হলেও ফেসবুক তাদের বিভক্তি ছড়াতে পারেনি, গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে পারেনি এবং নারী ও শিশুদের তাদের শরীর নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারেনি।’
তিনি বলছেন, এর একমাত্র সমাধান হতে পারে, কংগ্রেস যদি ফেইসবুকের কর্মকাণ্ড তদারকি করে।
বুধবার সকালে ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যেখানে তিনি ফেইসবুকের সাম্প্রতিক বিভ্রাট ও হাউজেনের বক্তব্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।
জাকারবার্গ বলেন, তাদের বিষয়ে যে সব তথ্যপ্রমাণ সম্প্রতি প্রচার করা হচ্ছে, তাতে ফেইসবুকের কাজ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যেভাবে কোম্পানিকে তুলে ধরা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আমরা সব সময়েই নিরাপত্তা, মঙ্গল ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্ব দেই।
‘অনেক দাবির যৌক্তিকতা নেই। যদি আমরা গবেষণার ফলাফলকে অবহেলাই করতে চাইতাম, তাহলে কি আমরা এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বোঝার জন্য গবেষণা করতাম? যদি আমরা ক্ষতিকর কনটেন্টের বিষয়ে লড়াই না করতাম, তাহলে কি আমরা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এটি ঠেকাতে এতো কর্মী নিয়োগ করতাম? আমাদের চেয়ে কি কেউ এতো বেশি কর্মী এই কাজে নিয়োগ দিয়েছে?’
‘মানুষের নিরাপত্তা এবং মঙ্গলের চেয়ে আমরা মুনাফার প্রতি বেশি মনোযোগ দেই বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। একটা উদাহরণ হলো, যখন আমরা নিউজ ফিডের ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন আনি, যার ফলে ভাইরাল ভিডিওর পরিবর্তে মানুষজন নিজেদের বন্ধু এবং স্বজনদের ভিডিও বেশি দেখতে পারে। আমরা জানি, মানুষ এর ফলে ফেইসবুকে কম সময় কাটাবে, কিন্তু গবেষণায় যেহেতু এটা মঙ্গলজনক বলা হয়েছে, আমরা করেছি। যারা মুনাফার জন্য কাজ করে, তারা কি এটা করবে?’ তিনি প্রশ্ন করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা যা কিছু তৈরি করছি, সেখানে শিশুরা যাতে নিরাপদ থাকে এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর না হয়, এটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর পেছনে সময় দিয়েছি।’
প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী মাসে তাদের ২৭০ কোটি নিয়মিত ব্যবহারকারী রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মতো পণ্যও ব্যবহার করে। কিন্তু ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ফেইসবুকের বিরুদ্ধে।
ফেইসবুকে পরিবর্তন দরকার, এই সিদ্ধান্তে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক- উভয় রাজনৈতিক দলের সিনেটররা একমত হয়েছেন।
শীর্ষনিউজ/এসএফ