
shershanews24.com
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর, ২০২১ ১২:৫৮ অপরাহ্নসাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের সৌজন্যে: আমাদের অনেকের পরিচিত একটি শহর জার্মানির মারবার্গ। কিন্তু এ শহরে কারা বসবাস করে যেটা অনেকেই অজানা। হ্যাঁ, আমরা এখন জানবো এই শহরের বাসিন্দা কারা। জানা গেছে, এই শহরে শুধু অন্ধরা বসবাস করে। অন্ধদের জন্য জার্মানির এই মারবার্গ শহরটি আদর্শ। অন্ধদের চলাফেরার কষ্ট দূর করতে এ শহরে ট্রাফিক লাইট, বাস স্টপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া সবকিছুতেই আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে।
অন্ধদের শহরমারবার্গ
আট বছর বয়সে লিওন পোর্টয বাবার কাছ থেকে প্রথম কম্পিউটার পেয়েছিলেন। সে বয়সে এটা খুবই খুশির খবর ছিল তার জন্য। কিন্তু বেশিদিন এই আনন্দ টেকেনি লিওনের জীবনে। জন্মগত ত্রুটির কারণে ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি হারাতে থাকেন তিনি। তবে নয় বছর বয়সেই নতুন একটি বিষয় শিখে ফেলেন লিওন। কীভাবে ওয়েবসাইট ও ইলেকট্রনিক মেসেজ পড়ার জন্য মেশিনে নেওয়া একটি কণ্ঠকে গতিশীল করা যায় এবং তথ্যকে আরও দ্রুত বোঝা যায় সব শেখেন। সেই শিক্ষা এখনো তার জীবনে কাজে আসছে। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এমন যে কারও চেয়ে তিনি এখন পাঁচগুণ দ্রুতগতিতে লেখার ভাষা শব্দ আকারে শুনতে পারেন।
ছোট থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি লিওনের ভালোবাসা ছিল। এই ভালোবাসা আরও বৃদ্ধি পায় যখন তিনি জন্মস্থান মধ্য জার্মানির শহর মারবার্গে আসেন। সেখানে অন্ধদের জন্য স্পেশাল ও মধ্যযুগীয় একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন লিওন। এই একটি পদক্ষেপ তাকে নিয়ে গিয়েছে উদ্ভাবনের নতুন দুনিয়ায়।
মারবার্গ শহরকে বলা হয় অন্ধদের শহর। এ শহরে অন্ধ ও ক্ষীণ দৃষ্টির মানুষেরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারেন, থাকতে পারেন স্বচ্ছন্দে। মারবার্গে রয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্ধদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া শহরটি বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অন্ধ তরুণদের জন্য কাজ করত। তাদের বিভিন্ন সুযোগ দেওয়া এবং অন্ধদের জন্য নানা ধরনের উদ্ভাবন করা হয় প্রতিষ্ঠানটি থেকে। এর মধ্যে গাণিতিক হরফও ছিল। এ শহরে সবকিছু অন্ধদের উপযোগী করে বানানো হয়েছে। এক কথায়, অন্ধ যে কোনো ব্যক্তি নিজেকে এ শহরকে ভালোবেসে ফেলবেন মুহূর্তেই।
উদ্ভাবন
মারবার্গে অন্ধদের জন্য যেসব উদ্ভাবন করা হয়েছে সেগুলো হয়তো অন্য জায়গাতেও পাওয়া যায়। তবে এখানে যা আছে সেগুলো সত্যিই ভিন্ন মাত্রা যোগ করে অন্ধদের জীবনে। এ কথা স্বীকার করেন অন্ধ ব্যক্তি সবাই। মারবার্গে গেলে সবার আগে বেশ কয়েকটি দৃশ্য নজর কাড়বে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ট্রাফিক লাইটের বিপ বিপ শব্দ, ফুটপাত ও মেঝেতে অসংখ্য ছিদ্র যেগুলো কোনো ধরনের বিপদ বা বাধার সম্মুখীন হলেই সংকেত প্রদান করে। ভবনগুলোও মেঝে বানাতে ও মানচিত্র তৈরিতে বিশদ বর্ণনা মেনে ব্রোঞ্জ মডেল ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মারবার্গের দুর্গ ও টাউন স্কয়ারের কথা। এ জায়গাগুলো এতটাই বিশদভাবে অন্ধদের উপযোগী করে তোলা হয়েছে যে, এখানে চলাফেরা করতে গিয়ে কোনো অন্ধ ব্যক্তিরই কষ্ট হয় না। এমনকি কারও সাহায্য ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে তারা চলাফেরা করতে পারেন।
শহরের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শহরটির স্বাভাবিক আকৃতি। মারবার্গ বেশ ছোট ও পাহাড়ি একটি শহর। ওপরের দিকে ওঠাই হোক, অথবা নিচের দিকে নামা- এখানকার সড়ক ধরে খুব সহজেই চলাফেরা করা যায়। অবসর সময় কাটানোর জন্য শহরটিতে নানা উপায়ের বন্দোবস্ত করা আছে। যেমন- অন্ধদের জন্য ঘোড়ায় চড়ার স্কুল, নৌকা চালানো, ফুটবল খেলা, পাহাড়ে চড়া ও স্কিইং। মারবার্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্ধদের লেখাপড়ার হার অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, অন্ধ শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে লেখাপড়া শেষ করেছে এমন উদাহরণও আছে।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি
অন্ধদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্লিসতা এখন পর্যন্ত অনেক ধরনের উদ্ভাবন করেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো উদ্ভাবন করে যাচ্ছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন জিনিস তৈরি করার মতো উদ্ভাবন তো তাদের রয়েছেই, সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টি অন্যান্য বিভাগের উন্নতকরণ বিষয়ে মনোযোগী হয়েছে। আইন ও মনোবিজ্ঞান বিষয় দুটো অন্ধ শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ বিষয়গুলোর বই ভারী হলেও স্ক্রিন রিডারের কারণে সহজেই পড়া যায়। অন্ধদের জন্য অনেকদিন ধরে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়টি আবদ্ধ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এটিকেও উন্মুক্ত করে দিচ্ছে অন্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য।
জার্মানির ডাসেলডর্ফে বায়োকেমিস্ট্রি ও কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ালেখা করছেন লিওন। তিনি এ শহরের সর্বপ্রথম অন্ধ বায়োকেমিস্ট্রির শিক্ষার্থী। তার পথ অনুসরণ করে ধীরে ধীরে এ বিষয়ে অন্ধ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার আগ্রহ বেড়েছে। লিওন বলেন, ‘আমি নিজেকে অগ্রপথিক মনে করি না। কারণ আমি জানি আমি সত্যিই একজন অগ্রপথিক।’
রসায়ন বিষয়টি যে কারও জন্যই একটু কঠিন। কারণ এখানে প্রচুর ল্যাবরেটরির কাজ থাকে, অনেক ছবি-চার্ট আর গ্রাফ আঁকতে হয়। এ কারণে অন্ধদের জন্য সেটি পড়া কিছুটা কঠিন। যার কারণে তাদের জন্য বিষয়টিতে পড়া উচিত নয় বলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা থাকে। মারবার্গের কার্ল-স্ট্রেল স্কুলের শিক্ষক টোবিয়াস মানকে বলেন, ‘কোনো মানুষ খালি চোখে অণু-পরমাণু দেখতে পায় না। কিন্তু বইয়ে লেখা রসায়নের সংজ্ঞা সূত্র সবাই দেখতে পায়। অন্ধরাও পড়তে পারে তাতে কী লেখা আছে। তাহলে দৃষ্টিশক্তি থাকা সত্ত্বেও মানুষ যে জিনিস দেখতে পায় না, অথচ সে বিষয়ে পড়তে পারে- তাহলে অন্ধদের জন্য সেই একই বিষয় পড়তে বাধা থাকবে কেন?’ লিওনকে রসায়ন পড়িয়েছেন টোবিয়াস মানকে। আজ লিওন নিজ শক্তিতে বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়ছে। এটি তার জন্য ভীষণ আনন্দের। তিনি চান, অন্ধত্ব যেন কোনো শিক্ষার্থীর কখনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
অন্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠান
২০১৩ সাল থেকে স্কুলে চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন টোবিয়াস মানকে। সে সময়, উন্নত বা আধুনিক রসায়নের কোনো ক্লাস হতো না। তিনি ও তার কলিগরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জাম কিনবেন। তাদের সমর্থন করেছিল মারবার্গের ফিলিপস বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ। অর্থ সহায়তা দিয়েছিল দাতব্য সংস্থা রিইনহার্ড-ফ্র্যাংক ফাউন্ডেশন। মাস্টার্সে পড়ার সময় রসায়ন শিক্ষার জন্য আরও কী কী আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন সে বিষয়ে থিসিস করেছিলেন মানকে। এ বিষয়ে তিনি বেশ কয়েকটি লেখাও প্রকাশ করেছেন।
সাধারণত ক্লাসরুমে যেসব বিজ্ঞান মডেল ব্যবহার করা হয়, ব্লিসতা সেগুলো অন্ধদের জন্য ব্যবহার করেনি। ব্লিসতা মডেলগুলো পুরো বিজ্ঞান প্রক্রিয়াকে ব্যাপক ও বিস্তৃত আকারে তুলে ধরেছে যেন অন্ধ শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা না হয়। যেমন- বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল রসায়নবিদ মিলে পানির অণুর ত্রিমাত্রিক একটি মডেল তৈরি করেছেন। এই মডেলকে সমতলভাবেও ভেঙে ফেলা যায়। শিক্ষার্থীরা তিনের জায়গায় একে দ্বিমাত্রিক চিন্তা করে নতুন সূত্র যেন ভাবতে পারে তাই এ পদ্ধতির আবিষ্কার।
মানকের কলিগ তানজা একটি থ্রি ডি প্রিন্টার প্লাস্টিক মডেল বানিয়েছেন। জিনিসটি কিছুটা নদীর মতো বাঁকা আকৃতির। কলের নিচে ধরলে পানি আঁকাবাঁকা মডেলটি দিয়ে প্রবাহিত হয়। শিক্ষার্থীরা সে শব্দ শুনে বুঝতে পারে পানি দ্রুত প্রবাহিত হচ্ছে নাকি ধীরে। তারা জানতে পারে মডেলটি চ্যাপ্টা আকৃতির, পানি কতটা গভীর পর্যন্ত যেতে পারে, নদীর পানি কেন গরম হয়, মাছ কেন পানিতে থাকে ইত্যাদি নানা বিষয়ে। যেহেতু তারা চোখে দেখতে পায় না, এসব বিষয় তারা সহজেই অনুধাবন করতে পারে শব্দ শুনে শুনে।
মানকে বলেন, ‘বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক গবেষণা না দেখেই করা হয়। আপনি জিনিস ছুঁয়ে দেখতে পারেন, কোনটা ঠাণ্ডা গরম বুঝতে পারেন, ঘ্রাণ পান এবং শুনতে পান। খাবারের ক্ষেত্রে খেয়ে স্বাদ পরখ করেন। বিজ্ঞানে আগে গবেষণা করে পরে ফল পাওয়া যায়। অন্ধদের বেলাতেও বিষয়টি একই রকম। আগে গবেষণা, পরে ফল। অন্যদিকে, নিয়মিত শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা দৃষ্টির ওপর বেশি নজর দিই। আমি যদি পাঁচ সেকেন্ডেরও একটি গবেষণা করি, সেটা আমার সামনে উপস্থিত ৩০ জন শিক্ষার্থী হয়তো একসঙ্গে দেখতে পায়। একজন শিক্ষকের জন্য এটি অনেক দ্রুত। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বোঝার ক্ষমতা শিক্ষকের মতো নয়। তাদের কিছুটা হলেও সময় লাগে যে কোনো বিষয় বোঝার জন্য। এদিক থেকে অন্ধরা সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের বোঝার ক্ষমতা ভালো হলেও তারা দেখতে পায় না। তাদের না দেখে বোঝানোর জন্য আমাদেরও সব সময় নতুন নতুন পদ্ধতির আবিষ্কারের মধ্যে থাকতে হয়।’
২০১৭ সালে, মানকের স্কুল অ্যাডভান্স কেমিস্ট্রির কোর্স চালু করে। ২০১৯ সাল নাগাদ এই বিষয়ের চাহিদা এত বেড়ে যায় যে, শিক্ষার্থীরা দুটো করে ক্লাস করার আগ্রহ প্রকাশ করে। ততদিনে স্কুলের ল্যাব অন্ধ ছাত্রদের চাহিদার সঙ্গে নিজেদের কিছুটা হলেও মেলাতে পেরেছে। ছিদ্রযুক্ত ধাতব জিনিসে আগুন জ্বালাতে হয় এমন বার্নারের বদলে বৈদ্যুতিক বার্নার যুক্ত করেছে। মানকে ও তার কলিগ তানজা মিলে শিক্ষার্থীদের তাপ ও আগুন নিয়ে জানানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। জ্বলন্ত মোমবাতিতে জ্বলার জন্য ব্যবহার করা হয় তাপ সংবেদনশীল কাগজ। ১৯৯০ এর দশকে বিশেষ একটি সেন্সর বানানো হয়, যেটি কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের সাহায্যে কোনো তরলকে উজ্জ্বল বা অন্ধকার করে দেয়।
করোনার সময়
মহামারীতে মানকে কভিড-১৯ এর ইনফেকশন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চার্ট প্রিন্ট করে পড়িয়েছেন। ভাইরাসের কারণে যখন স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, শিক্ষকরা তখন তাদের বাড়িতে পড়ার জন্য মডেল তৈরি করে দিয়েছিলেন। প্রতিটি মডেল শিক্ষার্থীরা স্কুলে একবার হলেও প্র্যাকটিস করেছিল। বাড়ির কাজ হিসেবে তাই মডেলগুলো ব্যবহারে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। পরে নিজেরা এসব মডেল থেকে নতুন নতুন আরও তথ্য বের করেছে।
গত কয়েক বছর ধরে দেখতে পায় এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কার্ল-স্ট্রেল স্কুল ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। তারা চান, অন্ধ শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার সময় সাধারণ নিয়মের বাইরে নতুন ও অত্যাধুনিক নানা জিনিস ব্যবহার করে এবং এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। গবেষণামতে, শিশু ও বড়রা দেখার চেয়ে বিভিন্ন সেন্সের সাহায্যে নতুন নতুন নানা তথ্য দ্রুত শিখতে পারে। মানকে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা যত বেশি হয়, তত শিক্ষা দীর্ঘস্থায়ী হয়।’
লিওনের মতে, এটি শুধু একটি স্কুল নয়। পুরো পৃথিবীকে অন্ধদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। এখানে লেখাপড়ার পর তিনি মারবার্গে যেতে পেরেছিলেন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। শব্দ করা ট্রাফিক লাইট, কথা বলা বাস স্টপ এবং দেখতে পায় এমন মানুষ অন্ধদের চলাফেরার জন্য বেশ সাহায্য করে। মারবার্গের বাস চালকদের অন্ধ যাত্রীরা সড়ক পার হওয়ার সময় গাড়ি থামানোর প্রশিক্ষণ নেওয়া আছে। দোকানদাররা নিয়মিত অন্ধ গ্রাহকদের সঙ্গে কেনাবেচা করেন, অনেক রেস্টুরেন্ট ব্রেইল ভাষায় মেন্যু দেয়।
লিওন বলেন, ‘মারবার্গে প্রতিটি আলাদা জিনিস একটি অন্যটির সঙ্গে খুব ভালোভাবে সংযুক্ত। তবে কিছু ভিন্নতা তো আছেই। এটাই মারবার্গের বিশেষত্ব। ব্লিসতাতে তো বটেই, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক অন্ধ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেও কমবেশি অন্ধ কর্মচারী রয়েছে।’
কর্মক্ষেত্রে অন্ধ ব্যক্তি
জার্মানির অ্যাসোসিয়েশন অব ব্লাইন্ড-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও অন্ধ বিচারক উই বয়সেন। এই প্রতিষ্ঠানটিও মারবার্গে অবস্থিত। তিনি ১৯৬০-এর দশকে মারবার্গে আইন পড়াতেন। কার্ল-স্ট্রেল স্কুল পরিদর্শনও করেছেন। তার মতে, মারবার্গে যে স্বনির্ভরতার বিকাশ ঘটেছে তা নতুন সব উদ্ভাবনকে আরও গতিময় করবে।
মারবার্গের একজন অন্ধ সফটওয়্যার ডেভেলপার বাহাদ্দিন বাতমাজ। অন্ধদের জন্য উদ্ভাবিত অনেকগুলো ফিচারের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তিনি খুবই আনন্দিত যে তাদের করা নকশাগুলো অন্যদের কাজে আসছে। কথা বলা বাস স্টপের বিষয়ে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এখানে বোতাম চাপলে পরের বাস ও তার গন্তব্য সম্পর্কে জানা যায়। এ পদ্ধতি যে শুধু অন্ধরা ব্যবহার করতে পারবেন এমন নয়। দৃষ্টিশক্তি আছে এমন ব্যক্তিদের জন্যও এটি বেশ উপকারী। স্ক্রিন রিডারদের জন্য তিনি এমন কিছু ওয়েবসাইট বানিয়েছেন যেন সার্চ র্যাংকিং খুঁজলে সেটি লাফ দিয়ে ওপরে উঠে আসে।
বিশ্বজুড়ে অন্ধ উদ্ভাবকরা বিভিন্ন বাধা দূর করছেন। সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে মারবার্গ যেভাবে অন্ধদের জন্য সহায়ক হয়েছে, এখানকার মানুষরাও ঠিক ততটাই তাদের সাহায্য করছে। আধুনিক সব প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়েই মারবার্গ হয়ে উঠেছে অন্ধদের শহর।
সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১)